জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১-এর আলোকে ইনক্লুশন ও জেন্ডার সম্পর্কে জানবো। বর্তমান শিক্ষাক্রমে শ্রেনিকার্যক্রমে সকল শিক্ষার্থীদের (ছেলে-মেয়ে, সামনে পিছনে, মনোযোগী অমনোযোগী, মেধাবী-দুর্বল, শহর-গ্রাম, ধনী-দরিদ্র, ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন) সমান গুরুত্ব দেওয়া কি সম্ভব? এক্ষেত্রে আপনি কী কৌশল অবলম্বন করেন? ইনক্লুশন ও জেন্ডার নিয়েই আজকে আমাদের আলোচনা।
সূচীপত্র
- 1 ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১ : পাঠের ভিডিও
- 2 শিক্ষাক্রমে ইনকুশন ও জেন্ডার সংবেদনশীলতা
- 3 দুটি মতবাদের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেওয়া হলাে
- 4 শিক্ষাক্রম রূপরেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলাে
- 5 শিক্ষাক্রমে জেন্ডার রূপান্তরমূলক (Transformative) এপ্রােচ
- 6 এই এপ্রােচ বাস্তবায়নের জন্য যা যা প্রয়ােজন
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১ : পাঠের ভিডিও
শিক্ষাক্রমে ইনকুশন ও জেন্ডার সংবেদনশীলতা
শিক্ষাক্রমে ইনকুশন
বিশ্বব্যাপী ইনফ্লুশন (Inclusiveness) চর্চার ক্ষেত্রে দুই ধরনের মতবাদ পরিলক্ষিত হয়- ঘাটতি/ সীমাবদ্ধতা মতবাদ (Deficit view) এবং ন্যায্যতামূলক মতবাদ (Equitable view) ঘাটতি/ সীমাবদ্ধতা মতবাদ, শিখনের সমস্যা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যেই সমস্যা দেখতে পায়।
এ ধরনের সমস্যার উদাহরণ হলােশিক্ষার্থী সমাজের অগ্রহণযােগ্য আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে এসেছে, শিক্ষার্থীর মাতৃভাষা ভিন্ন, শিক্ষার্থী হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না, দেখতে কিংবা শুনতে পারে না। এই ধরণের সমস্যা মাঝারি/ তীব্র/ গুরুতর হতে পারে।
ফলে শিক্ষার্থীর সাহায্য ও পরিচর্যাকারী প্রয়ােজন হয়। অপরদিকে ন্যায্যতামূলক মতবাদ অনুসারে শিক্ষার্থীর পরিবর্তে শিক্ষা ব্যবস্থা ও কাঠামাের প্রতিবন্ধকতাকে শিখনের সমস্যার জন্য দায়ী করা হয়।
যেমন, নির্ধারিত শিখন যােগ্যতা সকল শিক্ষার্থীর সামথ্যকে বিবেচনা না করা, শিক্ষকের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা, বহুমাত্রিক ভাব বিনিময় কৌশলের অনুপস্থিতি ও উপকরণের অভাব।
এভাবে এই মতবাদ অনুসারে শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা উপলব্ধি করে শিক্ষার্থীর চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী সামগ্রিক কাঠামােকে নমনীয় করা হয় (Ahsan et al., 2012) নিচের চিত্রে (তথ্যসূত্রঃ ACIE, 2017)
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১
দুটি মতবাদের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেওয়া হলাে

শিক্ষাক্রম রূপরেখায় ইনকুশন এর ন্যায্যতামূলক মতবাদ (Equitable view) গ্রহণ করা হয়েছে। এই মতবাদের আলােকে শিক্ষাক্রম রূপরেখার জেন্ডার ও ইনফ্লুশন সংশ্লিষ্ট চিন্তার ক্ষেত্রে, ধারণায়, জেন্ডার ও ইনফ্লুশন এর লক্ষ্যদল নির্ধারণে, কর্মসূচি পরিকল্পনায়, সূচক নির্ধারণে, ও সার্বিক ধারণায় একটি বড় ধরনের রূপান্তরের প্রয়ােজন।
নিচে (ACIE, 2017; Ainscow, 2005; DPE, 2011) বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হলাে
চিন্তার ক্ষেত্রে | শিক্ষায় জেন্ডার ও ইনফ্লুশন কোনাে ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয় নয় বরং মানবাধিকার ও আইনগত দায়বদ্ধতা; |
ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে | শিক্ষায় জেন্ডার ও ইনকুশন যেসব জনগােষ্ঠী শিক্ষার বাইরে আছে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কোন আলাদা ব্যবস্থা নয়, বরং সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাঠামাে, পরিবেশ ও ব্যবস্থাগত পরিবর্তন; |
লক্ষ্যদল নির্ধারণ | শিক্ষায় জেন্ডার ও ইনকুশন কোনাে পূর্বনির্ধারিত গােষ্ঠীর জন্য নয় বরং বৈষম্যের শিকার সকল শিশুর (শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী ও শিক্ষা বহির্ভূত) জন্য; |
কর্মসূচি পরিকল্পনায় | শিক্ষায় জেন্ডার ও ইনকুশন কোনাে বিশেষ গােষ্ঠীকে আলাদাভাবে সেবা প্রদান করা নয় বরং ক্ষমতায়ন ও ব্যবস্থাগত পরিবর্তন করার মাধ্যমে সকলের ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক চাহিদা পূরণ; |
সূচক নির্ধারণ | শিক্ষায় জেন্ডার ও ইনফ্লুশন শুধু শিক্ষায় প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা নয় বরং সক্রিয় অংশগ্রহণ, যােগ্যতা অর্জন ও গ্রহনযােগ্যতা নিশ্চিত করা; |
সার্বিক ধারণায় | শিক্ষায় জেন্ডার ও ইনকুশন কোনাে বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ নয় বরং শিক্ষার সার্বিক সংস্কার; |
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১
শিক্ষাক্রম রূপরেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলাে
এটি নমনীয়, সংবেদনশীল ও যােগ্যতাভিত্তিক; ফলে ইনফ্লুশন সহায়ক। একই সঙ্গে অতি মেধাবী শিশুদের শিখন-চাহিদা, সক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনায় এনে অগ্রগামী শিখনের (accelerated learning) চর্চাকেও বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে এই শিক্ষাক্রম যেন ধারণ করতে পারে তা বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
শিক্ষার্থী যেন তার সবলতা অনুযায়ী কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে বয়সের সীমা অতিক্রম করে দ্রুত শিখন কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীসহ অন্য যেকোনাে শিক্ষার্থীর বিশেষ চাহিদা বিবেচনায় রেখে শিক্ষাক্রম এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বহুমাত্রিকতা/সহজীকরণ/নমনীয়তার (curriculum differentiation) সুযােগও এক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, শিক্ষাক্রম রূপরেখায় শিখন সময়কে শুধু বিদ্যালয়ের পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি, বরং শিক্ষার্থীর পরিবার, এলাকা, খেলাধুলায় যে শিখন হয় তাকেও বিবেচনায় আনা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীর ব্যাক্তিগত চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে শিক্ষাক্রমে বহুমাত্রিকতা চর্চার সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে।
শিশুর বৈচিত্রকে শিক্ষা উপকরণে বা নির্দেশনায় ব্যবহার অথবা শ্রেণিতে উপস্থাপনের সময় বিশেষ যত্নশীল হওয়া প্রয়ােজন। সামাজিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বাতিক্রমধর্মী শিশু বা সুবর্ণ শিশু বলা হয়ে থাকে।
UNCRPD (২০০৬) অনুযায়ী প্রতিবন্ধিতা মানব বৈচিত্র হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ব্যক্তিকে তাঁর প্রতিবন্ধিতার দ্বারা পরিচিত করাকেই মর্যাদা ও অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। UNCRPD (২০০৬) অনুযায়ী ইংরেজিতে অবশ্য প্রতিবন্ধিতার আগে ব্যক্তিকে উল্লেখ করার নির্দেশনা আছে (যেমন, Person with disability), তবে বাংলায় সেটি অনুসরণ করা যায় না।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইন-2013 (MoLPA, 2013) ও নিউরাে ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন- ২০১৩ (MoLPA, 2013a) অনুযায়ী ব্যক্তিকে তাঁর প্রতিবন্ধিতার দ্বারা পরিচিত করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া আছে।
তবে উল্লেখ্য যে, শিখন পরিবেশে শিশুদেরকে প্রতিবন্ধিতার মাত্রা অনুযায়ী (যেমন, মৃদু, মধ্যম, গুরুতর প্রভৃতি) সনাক্ত করার প্রয়ােজন নেই।
সার্বিকভাবে, শিক্ষাক্ষেত্রে শিশুদেরকে তাদের শিখন সামথ্য ও শিখন চাহিদা (যেমন, মৃদু সহায়তা, মধ্যম সহায়তা, অধিক সহায়তা) অনুযায়ী প্রকাশ করা প্রয়ােজন, যাতে করে শিশুর সমস্যার বদলে শিক্ষাব্যবস্থা কতটুকু সহায়তা প্রদান করতে সমর্থ তা পরিমাপ করা যায়।
একইভাবে, শিশু যাতে তাঁর নিজের জেন্ডার পরিচিতি (ছেলে, মেয়ে, তৃতীয়/ রূপান্তরিত লিঙ্গ) নিয়ে গ্রহণযােগ্যতা পেয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রবেশ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিখন অর্জন করতে পারে, সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১
জেন্ডার সংবেদনশীল উপায়ে ধারণাটি শিক্ষা উপকরণে বা নির্দেশনায় ব্যবহার, শিখন পরিবেশে অথবা শ্রেণিতে উপস্থাপন করতে হবে যাতে করে ইতিবাচক চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে জেন্ডার সংবেদনশীল ও রূপান্তরমুখি মানুষ হিসেবে তৈরি করা যায়।
শিশুর বহুমুখী বুদ্ধিমত্তার (Gardner, 1983) ধারণাকে ব্যবহার করে কোনাে শিশুর সবল দিকটিকে উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে তার বুদ্ধিমত্তার যে দিকগুলােতে অধিক পরিচর্যা প্রয়ােজন তার জন্য ব্যবস্থার সুযােগ রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ জেন্ডার, ধর্ম-বর্ণ, প্রতিবন্ধিতা, সামাজিক ও ভৌগােলিক অবস্থান নির্বিশেষে শিশুর সামর্থ্য, চাহিদা ও বৈশিষ্ট্যের বৈচিত্রকে বিবেচনা করে এই শিক্ষাক্রমটি উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।
এই গুরুত্ব বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যদলের জন্য ইনকুশন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশও করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ প্রতিবন্ধী এবং স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধী (নিউরাে ডেভেলপমেন্টাল ডিজ্যাবিলিটি) শিশুদের জন্য প্রবেশগম্যতা, ভাব বিনিময় কৌশল, ব্রেইল ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, নৃগােষ্ঠীর মাতৃভাষাভিত্তিক শিখনের প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ, তৃতীয় লিঙ্গের শিশুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, এবং দুর্যোগের সময় শিক্ষার ধারাবাহিকতাসহ বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় অংশগ্রহণের বিকল্প নমনীয় উপায় নির্ধারণ।
তবে মনে রাখতে হবে যে এই বিশেষ ব্যবস্থা যেন কোন সমান্তরাল ধারা সৃষ্টি না করে, বরং মূলধারায় অংশগ্রহণের প্রয়ােজনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান্তরকালীন সহযােগিতার সুযােগ সৃষ্টি করে।
শিক্ষাক্রম উন্নয়নের বিভিন্ন ধাপ যেমন শিখন-শেখানাে পদ্ধতি, মূল্যায়ন, শিখন-সামগ্রী তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শ্রেণি পর্যায়ে বাস্তবায়নসহ সকল ধাপকে জেন্ডার সংবেদনশীল ও ইনকুশন সহায়ক করার জন্য একটি কারিগরি নির্দেশনা তৈরি করা হবে।
যার মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই নির্দেশনা তৈরি করার সময় শিখন-বান্ধব আন্তর্জাতিক বা আদর্শ মানদণ্ডগুলাে বিবেচনা করা হবে; যেমন: UNCRPD (২০০৬) অনুযায়ী সকল শিক্ষাব্যাবস্থাকে Universal Design for Learning (UDL) মানদণ্ড অনুযায়ী শিখন পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১
শিক্ষাক্রমে জেন্ডার রূপান্তরমূলক (Transformative) এপ্রােচ
যদিও শিক্ষাক্রমে জেন্ডার কোন নতুন আলােচনা নয়, তবে এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হলে প্রচলিত জেন্ডার এপ্রােচকে নতুন দৃষ্টিতে দেখার প্রয়ােজন রয়েছে।
ইতােমধ্যে অনেকবার আলােচনায় এসেছে যে, যােগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীর শুধু জ্ঞান অর্জন করাই যথেষ্ট নয়, বরং পাশাপাশি তার দক্ষতা, মূল্যবােধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করাও জররি।
আর যােগ্যতা অর্জনের এই দায়িত্ব শিক্ষার্থীর নিজেরই, শিক্ষক বা তা পরিপার্শ্ব সেখানে একটি সহায়ক পরিবেশের ভূমিকা পালন করবে মাত্র।
এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় বার বার বলা হয়েছে, কীভাবে শিক্ষার্থীর ভূমিকা এখানে পরিবর্তিত হবে, এবং সমাজের প্রচলিত রীতি ও মূল্যবােধের শুধু অনুসরণকারী না হয়ে বরং সে প্রশ্ন করবে, এবং সকল ধরনের বৈষম্য দূর করে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে সক্রিয় হবে। প্রচলিত জেন্ডার সংবেদনশীল এপ্রােচ নিয়ে শিক্ষার্থীকে এই ভূমিকার জন্য প্রস্তুত করা কঠিন।
তাই এই শিক্ষাক্রমে জেন্ডার রূপান্তরমূলক (Transformative) এপ্রােচ বেছে নেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে জেন্ডার পরিচয় নির্বিশেষে প্রতিটি শিক্ষার্থী শুধু যে সমানভাবে বিকশিত হবার সুযােগ পাবে তা-ই নয়, বরং সে নিজেই প্রচলিত ক্ষমতার কাঠামােকে প্রশ্ন করতে শিখবে; এবং নিজের পরিবার, ও পরিপার্শ্ব থেকে বৈষম্য সৃষ্টিকারী উপাদান খুঁজে বের করে তা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেবে।
এই এপ্রােচ বাস্তবায়নে শুরুতেই যেটা প্রয়ােজন তা হল, জেন্ডার বৈচিত্র নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীকে নিজেকে দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশের সুযােগ করে দেয়া।
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১
নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গসহ সকল বৈচিত্রের মানুষ যাতে কোনরূপ বৈষম্য ছাড়াই শিখন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে, নিজ নিজ সক্ষমতা অনুযায়ী পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে, এবং নিজ সিদ্ধান্ত নেবার সক্ষমতা অর্জন করে তা-ই এই এপ্রােচ বেছে নেবার মূল উদ্দেশ্য।
যেহেতু এই শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের উপর জোর দেয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীর শিখন এখন আর শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং বাইরে নিজের পরিবারে, কমিউনিটিতে বাস্তব ও অর্থপূর্ণ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে সে শিখছে।
কাজেই এই শিখন অভিজ্ঞতাগুলাে এমনভাবে পরিকল্পনা করা হবে যাতে সে বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে তার পরিসরের বিভিন্ন অংশিজনের সাথে যােগাযােগের সুযােগ পায়, এবং একইসাথে সমাজে প্রচলিত জেন্ডার বৈষম্যসমূহকে চ্যালেঞ্জ করার উপলক্ষ্য ও সুযােগ ঘটে।
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১
এই এপ্রােচ বাস্তবায়নের জন্য যা যা প্রয়ােজন
ক. শিক্ষক প্রশিক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া জরুরি। শিক্ষক যাতে তার নিজের অবচেতনে থাকা বৈষম্যের উপাদান সনাক্ত করতে পারেন এবং সচেতনভাবে তা থেকে মুক্ত হতে সচেষ্ট হন সেজন্য তাকে প্রয়ােজনীয় সহায়তা দিতে হবে।
খ. শিক্ষার্থীদের শিখন অভিজ্ঞতা পরিকল্পনার সময় খেয়াল রাখা দরকার, জেন্ডার পরিচয়ের কারণে কেউ যাতে এই অভিজ্ঞতা অর্জনে কোন বাধার মুখে যা পড়ে। এছাড়া শিখন অভিজ্ঞতাগুলাের ধরন এমন হওয়া উচিৎ যাতে সেগুলাে প্রকৃতিগতভাবেই সমাজের প্রচলিত জেন্ডার স্টেরিওটাইপ, জেন্ডার শ্রমবিভাজন- এই বিষয়গুলােকে চ্যালেঞ্জ করে।
গ. বিদ্যালয়ের শিখন পরিবেশ ও অবকাঠামােগত সুযােগ যাতে সকল জেন্ডার পরিচয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকূল থাকে সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।
ঘ. শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও অন্যান্য অংশিজনের মধ্যে যাতে নিয়মিতভাবে অর্থবহ যােগাযােগ ঘটে, এমন ব্যবস্থা চালু রাখা; এর ফলে বিভিন্ন অংশিজন পরস্পরকে সহযােগিতার মাধ্যমে জেন্ডার রূপান্তরমূলক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।
ইনক্লুশন ও জেন্ডার : জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১
নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণি পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন ধরনের কৌশল ব্যবহার করলে সকল শিক্ষার্থীদের সমান গুরুত্ব ও সমান সুযোগ দেওয়া সম্ভব?
আপনার জন্য আরও কিছু তথ্য: