মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক ফার্স্ট এইড (পার্ট ১) প্রশিক্ষণ এর মডিউল-৩ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ (পর্ব-২)-এ আমরা মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলাে ব্যাখ্যা করতে পারবো এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণগুলাে চিহ্নিত করতে পারবো।
এই পাঠে আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপজনিত সমস্যা ও আসক্তিমূলক আচরণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এর মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক ফার্স্ট এইড (পার্ট ১) প্রশিক্ষণ আপনার জন্য সহজবোধ্য হয়ে উঠবে।
সূচীপত্র
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ
বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ চিহ্নিত করণ জরুরি এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে চলুন এই বিষয়ে আমরা জানার চেষ্টা করি-
আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপজনিত সমস্যা
নিচের ভিডিওতে রইস নামে একজন ছাত্রের ঘটনা শুনুন
রইসের ঘটনা
রইস (ছদ্মনাম), সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একদিন তার বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে পাশের দুই গ্রামে দুটি দলের মধ্যে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। রইস খেলা দেখার জন্য মাঠে যায়।
খেলা চলাকালীন একপর্যায়ে দুই দলের মধ্যে প্রচন্ড মারামারি শুরু হয়। দুর্ভাগ্যবশত রইস মারামারির মধ্যে পড়ে যায় এবং কোন ভাবেই বের হতে পারে না। এক পর্যায়ে তার সামনে একজন খেলোয়াড় গুরুতর জখম হয় এবং খুব খারাপভাবে রক্ত ঝরতে দেখে ।
এরপর থেকে রইস পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে না, মেজাজ খিটখিটে থাকে, ঘুমালেই মারামারির স্বপ্ন দেখে,
এক সঙ্গে অনেক লোক দেখলে তা এড়িয়ে চলে এবং তার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে কেন সে খেলা দেখতে গিয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় একমাস হয়েছে তারপরেও সে কোনভাবেই ভুলতে পারছে না।
আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপজনিত সমস্যা
এটি একটি উদ্বেগজনিত ব্যাধি, যা অতিরিক্ত চাপ, ভীতিজনক বা বিরক্তিকর ঘটনার কারণে ঘটে।
এটি এমন একটি মানসিক ব্যাধি, যা এমন ব্যক্তিদের মধ্যে হতে পারে যারা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, একটি মারাত্নক দুর্ঘটনা, একটি সন্ত্রাসী কাজ, যুদ্ধ, ধর্ষণ বা যাদের মৃত্যুর হুমকির মতাে আঘাতমূলক ঘটনার অভিজ্ঞতা হয়েছে বা প্রত্যক্ষ করেছে।
আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপের লক্ষণসমূহ
১. দুঃস্বপ্ন দেখা।
২. একই স্মৃতি বারবার মাথায় আসা।
৩. ঘুমের সমস্যা হওয়া।
৪. অপরাধবােধ।
৫. হঠাৎ চমকে ওঠা।
৬. আবেগ প্রকাশে ভারসাম্যহীনতা।
৭. নিজের ভিতরে ভয়ের অনুভূতি হওয়া।
৮. অতিরিক্ত সতর্ক থাকা।
৯. ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাহীনতা।
আসক্তিমূলক আচরণ কী?
আসক্তি হলাে একটি দীর্ঘস্থায়ী মস্তিষ্কের রােগ যা নিজেকে একটি দ্রব্যের বা আচরণের উপর নির্ভরশীলতা তৈরি করে।
নেতিবাচক পরিণতি স্বত্ত্বেও, আকাঙ্ক্ষার সাথে যুক্ত হয়ে এই মানসিক রােগটি একটি বাধ্যতামূলক আচরণে পরিণত হয়।
আসক্তিমূলক আচরণের লক্ষণসমূহ
১. মনােযােগ কমে যাওয়া;
২. নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা;
৩. মিথ্যা কথা বলা;
৪. মেজাজ খিটখিটে হওয়া;
৫. ঘুমের অসুবিধা;
৬. ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া বা বেড়ে যাওয়া;
৭. চুরি করা;
৮. অপরাধবােধ;
৯. ওয়াদা ভঙ্গ করা;
১০. বিষন্ন মেজাজ;
১১. সামাজিক বন্ধন কমে যাওয়া;
১২. নতুন জিনিসপত্র কেনার প্রবণতা;

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ (পর্ব-২) সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন ১: নিম্নে কাদের মধ্যে আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ হবার সম্ভাবনা কম?
ক. যাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা হয়েছে
খ. যারা মারাত্নক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বা দেখেছে
গ. যাদের যুদ্ধ দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে
ঘ. কোনটিই নয়
প্রশ্ন ২: আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ কি ধরণের মানসিক ব্যাধি?
ক. বিষণ্ণতামূলক
খ. আসক্তিমূলক
গ. উদ্বেগজনিত
ঘ. চাপমূলক
প্রশ্ন ৩: কোনটি আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ এর লক্ষণ নয়?
ক. দুঃস্বপ্ন দেখা
খ. একই কাজ বার বার করা
গ. ঘুমের সমস্যা হওয়া
ঘ. হঠাৎ চমকে ওঠা
প্রশ্ন ৪: আসক্তি হলো ______ মস্তিষ্কের ব্যাধি
ক. ক্ষণস্থায়ী
খ. দীর্ঘস্থায়ী
গ. আঘাত জনিত
ঘ. ক্ষতজনিত
স্বপ্ন ইশকুল এর শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ (পর্ব-২) আর্টিকেলটি শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই সংক্রান্ত আপনার কোনো মতামত বা অভিমত থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউবে আমাদের আপডেট পেতে চোখ রাখুন।