আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের কৌশল: নিজের যত্ন নেওয়া ও চাপ নিরসনে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম নিয়ে। আজকে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো নিজের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতি/কৌশল, মানসিক চাপ নিরসনে ব্যায়াম এর উপকারিতা এবং দুইটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম সম্পর্কে।
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই- নিজের যত্ন কী এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম।
সূচীপত্র
- 1 মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের কৌশল
- 2 নিজের যত্ন নেওয়া বিষয়ক মূল্যায়ন
- 3 আমরা নিজের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলাে চর্চা করতে পারি
- 4 মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
- 5 শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কারা করবেন ও কখন করবেন
- 6 শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের ভিডিও ও অনুশীলন-১
- 7 সহজ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
- 8 শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের ভিডিও ও অনুশীলন-২
- 9 চৌকোণা / বর্গাকৃতি / বক্স শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের কৌশল
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক ফার্স্ট এইড (পার্ট ১) অনলাইন প্রশিক্ষণে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের কৌশল মডিউলটি বুঝতে এটি আপনাকে সহযোগিতা করবে।
নিজের যত্ন নেওয়া বিষয়ক মূল্যায়ন
দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিচের কোনগুলাে চর্চা করছি তাতে টিক চিহ্ন দেই-
ক্রমিক | নিচের কোন পদ্ধতিসমূহ নিজে চর্চা করছি তা মিলিয়ে নিই ও নােটবুকে লিখে রাখি |
১ | নিয়মিত ও সময়মত ঘুমাই এবং খাদ্য গ্রহণ করি |
২ | প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটি ও শারীরিক ব্যায়াম করি |
৩ | প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গােসল করা ছাড়া থাকতে পারি |
৪ | বাগান করা/সেলাই করা পশুপাখি পালন করার শখ রয়েছে |
৫ | ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে আমি আনন্দ পাই না |
৬ | বই পড়লে/গান গাইলে অথবা শুনলে আমি ভালাে অনুভব করি |
৭ | নিজের মতাে কোনাে ভালাে কাজ করলে মন প্রফুল্ল হয় |
৮ | ধর্মীয় ও আত্মিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে আমার মনে শান্তি আসে |
৯ | পছন্দনীয় ও প্রিয়জনদের সাথে গল্প করলে আড্ডা দিলে আমার আনন্দবােধ হয় |
১০ | মানুষ প্রাণী জগতের প্রতি কোনাে উপকার করলে ভালাে লাগার অনুভূতি হয় |
আমরা নিজের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলাে চর্চা করতে পারি
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য নিজের যত্নের বিকল্প নেই। অনেকেই নিজের যত্নের বিষয়টিকে স্বার্থপরতার সাথে গুলিয়ে ফেলেন।
নিজের যত্ন বলতে স্বার্থপরতাকে বােঝায় না। নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ ও নিজের মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখার জন্য নিজের প্রতি খেয়াল রাখা এবং যত্ন নেওয়ার প্রয়ােজন রয়েছে।
ধীর, শান্ত ও নিয়ন্ত্রিত আচরণ করা, সুস্থির হয়ে চিন্তা করা, ও আবেগ অনুভূতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নিজের যত্ন নেওয়া দরকার/আবশ্যক।
শখের কাজ, ব্যায়াম, প্রিয়জনের সান্নিধ্য ইত্যাদি আমাদের মধ্যে আনন্দ হরমােন (Dopamine) নিঃসরণ করে, যা পক্ষান্তরে আমাদের স্ট্রেস হরমােন কমাতে সাহায্য করে।
নিজেকে ভালােবাসা ও নিজেকে মূল্য দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ আপনি ভালাে থাকলে আপনি অন্যদেরকে ভালাে রাখতে সাহায্য করতে পারবেন।
নিজের চিন্তা, অনুভূতি ও আচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন, সেই সাথে আপনি চারপাশের পরিস্থিতির উপর তখন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন।
মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
মানসিকভাবে ভাল থাকার জন্য ও সেই সাথে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং দুষিত কার্বন-ডাই-ডাইড় আমাদের শরীর থেকে বের করে দেই।
আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এই অক্সিজেন অপরিহার্য। গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পায়।
সেই সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে টক্সিন অর্থাৎ ক্ষতিকারক বিষাক্ত কেমিক্যাল দূর হয়। কিন্তু যখন আমরা খুব আবেগতাড়িত থাকি, নানা রকম মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাই তখন আমরা পুরােপুরি শ্বাস নিতে পারিনা।
আমাদের শরীরে প্রয়ােজনের তুলনায় অল্প। অক্সিজেন প্রবেশ করে যার ফলশ্রুতিতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাংসপেশী শক্ত অনুভূত হয়, মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়, হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায়।
এছাড়াও মনােযােগের ঘাটতি হয়, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়াসহ নানা রকম অসুবিধা অনুভূত হয়। তাই শারীরিক ভাবে সুস্থ ও মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্য শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকর।
গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম আমাদের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র (ANS- Autonomic Nervous System)কে স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যার মধ্যে অনেকগুলাে উপকারিতা রয়েছে যেমন হৃদস্পন্দনের গতি কমিয়ে আনা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা এবং নিজেকে শান্ত রাখা। যা পক্ষান্তরে শরীরে নিঃসৃত স্ট্রেসহরমােন অর্থাৎ cortisol এর মাত্রা কমিয়ে আনে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম কারা করবেন ও কখন করবেন
ছােট বড় সবার জন্যই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপযােগী। তবে ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ থাকলে, ভরা পেটে এই ব্যায়াম না করাই ভাল। খুব কম সংখ্যক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ব্যায়াম করতে গেলে অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে।
এই অসুবিধাগুলাের গুরুতর স্বাস্থ্যগত কোনাে ঝুঁকি নেই। সঠিকভাবে অনুশীলন করলে সাধারণত এই অসুবিধাগুলাে চলে যায়। তবে খুব বেশি অসুবিধা অনুভূত হলে এই ব্যায়ামটি করবেন না;
গর্ভবতী মহিলারা এই ব্যায়ামটি করতে পারবেন যেহেতু এই ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে তাই এটি মা এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য উপকারী। গভীর ও ধীরগতির এই ব্যায়াম মাংসপেশী শিথিলায়নে সাহায্য করে। মানসিক প্রশান্তি আনয়ন করে যা মা ও শিশুর মধ্যে ভাল থাকার অনুভূতি তৈরি করে।
দিনের যে কোনাে সময় এই ব্যায়াম করা যায় প্রতি দিন ৫ থেকে ১০ মিনিট এই ব্যায়াম করা যেতে পারে যা নিজের মনে এক ধরণের প্রশান্তি নিয়ে আসবে এবং যেকোন মানসিক চাপ বা সংকটের সময় নিজেকে শান্ত রেখে তা প্রতিরােধ করা সম্ভব হয়।
অন্যদিকে আমরা যখন মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুঃশ্চিন্তায় থাকি, তখনও এই ব্যায়াম আমাদেরকে শান্ত এবং স্থির রাখার মাধ্যমে মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে তাই মানসকিভাবে সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামটি নিয়মিত চর্চা করা ভাল।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের ভিডিও ও অনুশীলন-১
সহজ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
যারা এই প্রথম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম শিখছেন তাদের জন্য এটি সহজ অনুশীলনযোগ্য একটি ব্যায়াম। শুয়ে, বসে বা দাঁড়িয়ে এই ব্যায়াম যেকোনোভাবে আপনি করতে পারেন।
তবে আরাম করে বসে করাটাই শ্রেয়। কোনোরকম অসুবিধাবোধ করলে থামুন এবং পরে আবার চেষ্টা করুন।
১. নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিন নাভি পর্যন্ত। এ সময় আপনার কাঁধ এবং শরীর যতটা সম্ভব আরামদায়ক অবস্থায় রাখুন। খেয়াল করুন বাতাসে আপনার পেট ও বুক ফুলে উঠছে।
২. এবার মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ফু দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। মুখ দিয়ে এক ধরনের হুস শব্দ হচ্ছে। খেয়াল করুন শ্বাস ছাড়ার সময় আপনার বুক ও পেট নেমে আসছে।
৩. এভাবে বেশ কয়েক বার (৫-১০) করুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ভালোবোধ করছেন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের ভিডিও ও অনুশীলন-২
চৌকোণা / বর্গাকৃতি / বক্স শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম
সহজে অনুশীলনযোগ্য আরেকটি সহজ ব্যায়াম এটি।
১. প্রথমে কলম বা পেন্সিল দিয়ে কাগজে ২ ইঞ্চি মাপের একটি বর্গ আঁকুন। চারকোণা ধ ন প ফ দিয়ে চিহ্নিত করুন
২. এবার ধ থেকে ন বিন্দু পর্যন্ত যেতে মনে মনে ৪ গণনা করা পর্যন্ত সময় ধরে শ্বাস টানুন
৩. এবার ন থেকে প বিন্দু পর্যন্ত যেতে একই ভাবে ৪ গণনা করা পর্যন্ত সময় ফুসফুসে বাতাস ধরে রাখুন
৪. এবার প থেকে ফ বিন্দু পর্যন্ত যেতে একই ভাবে ৪ গণনা করা পর্যন্ত সময় ধরে শ্বাস ছাড়ুন
৫. এখন ফ থেকে ধ বিন্দু পর্যন্ত যেতে ৪ গণনা করা পর্যন্ত সময় ধরে ফুসফুস বাতাস মুক্ত রাখুন
৬. আবার শ্বাস নিন এবং এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন
স্বপ্ন ইশকুল এর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের কৌশল: নিজের যত্ন নেওয়া ও চাপ নিরসনে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম আর্টিকেলটি শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রকাশিত হয়েছে। এই সংক্রান্ত আপনার কোনো মতামত বা অভিমত থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউবে আমাদের আপডেট পেতে চোখ রাখুন।