মানসিক স্বাস্থ্য কী ও প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব জানবো আমরা আজকের পাঠে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্সের মডিউল এক রয়েছে এটি।
সূচীপত্র
- 1 বিষয়: মানসিক স্বাস্থ্য কী ও প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব এই মডিউল সম্পন্ন করলে আপনি-
- 2 মডিউল-১.১: প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় শিক্ষকের ভূমিকা
- 3 তথ্যপত্রঃ মডিউল ১.১ প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় শিক্ষকের ভূমিকা
- 4 মডিউল-১.২: মানসিক স্বাস্থ্য
- 5 মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি
- 6 মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি উপাদানসমূহ
- 7 মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা
- 8 মানসিক স্বাস্থ্য কী
- 9 মডিউল-১: কুইজ
- 10 মডিউল-২: শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ (পর্ব-১)
বিষয়: মানসিক স্বাস্থ্য কী ও প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব এই মডিউল সম্পন্ন করলে আপনি-
১. মানসিক স্বাস্থ্যের ধারণা, ঝুঁকি ও সুরক্ষার উপায় সম্পর্কে বলতে পারবেন;
২. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে শিক্ষকগণের ভূমিকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবেন;
৩. মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে শিক্ষক হিসেবে নিজেদের ভূমিকা অনুধাবন করে কাজ
করতে সচেষ্ট হবেন।
মডিউলের বিষয়বস্তু
মডিউল ১.১: মডিউল মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে শিক্ষকগণের ভূমিকা •
মডিউল ১.২: মানসিক স্বাস্থ্য।
- ক. মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুকি উপাদান;
- খ. মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা উপাদান;
- গ. মানসিক স্বাস্থ্য কী;
মডিউল-১.১: প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় শিক্ষকের ভূমিকা
শিক্ষকগণের কথোপকথন
শিক্ষক অলকা সাহা এবং মরিয়ম খাতুন রায়পুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন। তাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র সহকর্মী হওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং অনেকটাই বন্ধুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রনালয় হতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য তারা দুজনেই মনোনীত হয়েছেন। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের আজ আলোচনা চলছে।
অলকাঃ মরিয়ম আপা প্রশিক্ষণের চিঠি দেখলেন? মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশিক্ষণ! এমন প্রশিক্ষণ তো আগে কখনো হয় নি।
মরিয়মঃ হ্যাঁ, দিদি। এ প্রশিক্ষণ এবারই প্রথম শুরু হয়েছে। তবে আমি এ ধরনের একটি প্রশিক্ষণের অনলাইন অরিয়েন্টেশন পেয়েছিলাম কিছুদিন আগে।
অলকাঃ কিন্তু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়াও তো আরো অনেক জরুরি বিষয় আছে। সেসবের উপর প্রশিক্ষণ পেলে আরো ভালো হতো না?
মরিয়মঃ শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা লম্বা সময় কাটাই, সেজন্য ওরা যদি কোন মানসিক সংকট বা দূঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে যায়, তা অন্য অনেকের চেয়ে আমরা ভালো বুঝবো। এ কারণেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জানা প্রয়োজন যাতে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সহায়তা করার সঠিক উপায় আমরা শিখতে পারি।
অলকাঃ তা নাহয় ঠিক আছে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের প্রশিক্ষণ কি শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ভালো করাবে?
মরিয়মঃ অনেকক্ষেত্রেই শিক্ষার্থী যদি মানসিকভাবে ভালো না থাকে তখন পড়াশোনায় ভালো করা অনেক কঠিন হয়। এমন সময় তারা যদি উপযুক্ত মানসিক সহায়তা না পায় সেটা তাদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অলকাঃ এভাবে তো ভেবে দেখিনি, আপা। কিন্তু আমি ভাবছি যে বিদ্যালয়ের কাজের তো অনেক ব্যস্ততা, এই প্রশিক্ষণে যা শিখবো তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কাজ করতে কি সময় পাবো, বলেন?
মরিয়মঃ কঠিন হলেও আমরা যদি একটু সময় দিয়ে এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারি যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের অনুভূতি ও চিন্তার কথা নির্ভয়ে বলতে পারবে, অন্যের চিন্তা ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহমর্মী থাকবে, একইসাথে নিজেদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিজেরাই নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে শ্রেণি ব্যবস্থাপনা এবং তাদের পড়াশোনার পিছনে লেগে থাকার ক্ষেত্রে আমাদের পরিশ্রমও অনেকখানি কমে যাবে।
অলকাঃ আমি এখনই ভাবছিলাম, ওদের হয়ত এমন অনেক সমস্যা থাকতে পারে যা ওদের পরিবার বা বন্ধুবান্ধবকে বলতে পারছে না, কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশে এক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে সহায়তা করতে পারতাম।
মরিয়মঃ আপনি একদমই ঠিক বলেছেন অলকা দি। অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া সম্ভব হয় না। তবে বিদ্যালয়ে কিছু প্রশিক্ষিত শিক্ষক যদি প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
অলকাঃ এই আলোচনা হয়ে খুবই ভালো হলো আপা। এখন আমারো মনে হচ্ছে যে প্রশিক্ষণ পেলে এমন অনেক কিছুই শেখা যাবে যা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, আমাদের জন্যও উপকারী হবে।

প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় শিক্ষকের ভূমিকা (কথোপকথন বিষয়ক কুইজ)
প্রশ্ন ১: শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় শিক্ষকদের ভূমিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ক) শিক্ষকগণ অন্য অনেকের চেয়ে অধিক সময় ধরে শিক্ষার্থীদের আচরণগত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন
খ) শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকলে তাদের পড়াশোনায় নিজেদের ভূমিকা বৃদ্ধি পায়, যা শিক্ষকদের কাজের চাপ কমায়
গ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা ও দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষকগণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন
ঘ) বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোবল এবং জটিল পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারার মত দক্ষতা বৃদ্ধি পায় (Resilience)
ঙ) শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হয়
চ) উপরের সবগুলোই
প্রশ্ন ২: নিচের কোন কোন বক্তব্যটি সঠিক নয় (একাধিক উত্তর প্রযোজ্য)?
ক) নিজে থেকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা নিতে অনেক্ষেত্রেই শিক্ষার্থী বা তার পরিবারের জড়তা থাকে;
খ) শুধুমাত্র মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে পারবেন;
গ) শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে তার পড়াশোনায় ভাল ফলাফল করার সম্পর্ক খুবই সীমিত;
ঘ) অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও তার পরিবার অন্য অনেকের চেয়ে শিক্ষকদের উপর অধিক আস্থা রাখেন;
তথ্যপত্রঃ মডিউল ১.১ প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় শিক্ষকের ভূমিকা
১. শিক্ষকগণ অন্য অনেকের চেয়ে অধিক সময় ধরে শিক্ষার্থীদের আচরণগত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন;
২. শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকগণ অন্যতম নির্ভরযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন;
৩. শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে তার পড়াশোনায় ভাল ফলাফল করা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত;
৪. শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকলে তাদের পড়াশোনায় নিজেদের ভূমিকা বৃদ্ধি পায়, যা শিক্ষকদের কাজের চাপ কমায়;
৫. শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হয়;
৬. মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের ব্যাপারে শিক্ষার্থী ও তার পরিবার অন্য অনেকের চেয়ে শিক্ষকদের উপর অধিক আস্থা রাখেন;
৭. বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোবল এবং জটিল পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারার মত দক্ষতা বৃদ্ধি পায় (Resilience);
৮. শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
মডিউল-১.২: মানসিক স্বাস্থ্য
- ক. মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি উপাদান;
- খ. মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা উপাদান;
- গ. মানসিক স্বাস্থ্য কী?
মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি
সোহেলের ঘটনা
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহেল শারিরীকভাবে সুস্থ কিন্তু লম্বায় কিছুটা খাটো। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেত এবং শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ ইত্যাদি মনোযোগ সহকারে করার চেষ্টা করে। কিন্তু ক্লাসে শিক্ষক তাকে কিছু বলতে বা উপস্থাপন করতে বললে সে ঘাবড়ে যেত।
সে খুবই স্বল্পভাষী, তার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততারও অভাব ছিল যদিও শিক্ষকেরা মনে করতেন এটাই তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য।সহপাঠীদের সাথে সোহেলের বন্ধুত্ব বা মেলামেশাও কিছুটা কম ছিল। একপর্যায়ে তার স্কুলের উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে যায়। বিষয়টি লক্ষ্য করে শ্রেণিশিক্ষক সোহেলের সাথে একান্তে কথা বলেন এবং জানতে পারেন যে সহপাঠীরা সবসময় তার উচ্চতা ও চলাফেরা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য (বুলিং) ও হাসাহাসি করে।
এজন্য তার স্কুলে যেতে ইচ্ছে করেনা। শিক্ষক এটাও জানতে পারেন যে সে তার বাড়িতেও বিষয়টি কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না। কারণ সেখানেও তাকে তার উচ্চতা নিয়ে অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য করা হয়। শিক্ষক তার অভিভাবকের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা জানান, সোহেলের কোন অসুখ-বিসুখ নেই সুতরাং শিক্ষকের ধারণা ভুল। পরে শিক্ষক তাদেরকে সোহেলের মানসিক অবস্থার বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কুইজ
প্রশ্ন ১: কোন কোন বিষয়গুলো সোহেলের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে? (একাধিক উত্তর প্রযোজ্য)
ক) বিদ্যালয়ে নেতিবাচক মন্তব্য (বুলিং) হাসাহাসি
খ) শিক্ষকের সাথে কথা বলা
গ) বন্ধুত্ব বা মেলামেশা তুলনামূলকভাবে কম
ঘ) পরিবারের অবজ্ঞা
ঙ) উপরের সবগুলো
চ) কোনটি নয়
প্রশ্ন ২: সোহেলের সমস্যার ধরন নিচের কোনটি?
ক) শারীরিক, খ) মানসিক স্বাস্থ্যজনিত, গ) সামাজিক, ঘ) কোনটি নয়;
প্রশ্ন ৩: সোহেলের মতোই জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী ঝুঁকি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে?
ক) ব্যক্তি পর্যায়ে;
খ) বিদ্যালয় পর্যায়ে;
গ) পারবারিক পর্যায়ে;
ঘ) সামাজিক পর্যায়ে;
ঙ) উপরের সব পর্যায়ে;
মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি উপাদানসমূহ
সােহেলের ঘটনা ছাড়াও আরাে অনেক ঝুঁকি উপাদান রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের বা কিশাের-কিশােরীদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সকল ঝুঁকিমূলক উপাদানগুলােকে ৪টি পর্যায়ে তুলে ধরা হলাে-
ক. ব্যক্তি পর্যায়, খ. বিদ্যালয় পর্যায়, গ. পরিবার পর্যায়, ঘ. সামাজিক পর্যায়;
ব্যক্তি পর্যায় ঝুঁকিমূলক উপাদানগুলাে হচ্ছে –

> মানসিক চাপ;
> আত্ন-মর্যাদার ঘাটতি;
> নিপীড়ন;
> সামাজিক দক্ষতার ঘাটতি;
> তীব্র মানসিক আঘাত;
> পরিবারের কারাে কারাবাস;
> তিক্ত শৈশব;
> মাদক গ্রহণ ইত্যাদি;
> অসুস্থতা, প্রতিবন্ধকতা ও জিনগত জটিলতা।

বিদ্যালয় পর্যায় ঝুঁকিমূলক উপাদানগুলাে হচ্ছে
> বুলিং (শিক্ষক এবং সহপাঠীদের দ্বারা);
> শিক্ষক এবং সহপাঠীদের সাথে নেতিবাচক সম্পর্ক;
> শিক্ষার্থীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণ ১ বিদ্যালয়ের অনিরাপদ শারীরিক এবং মানসিক পরিবেশ;
> একাডেমিক ফলাফল খারাপ হওয়া;
> বন্ধু বা সহপাঠীদের দ্বারা প্রত্যাখান;
> শিক্ষকের কাছ থেকে প্রশংসার অভাব ইত্যাদি।
পরিবার পর্যায় ঝুঁকিমূলক উপাদানগুলাে হচ্ছে-
> পারিবারিক সহিংসতা ও বিচ্ছেদ;
> পিতা-মাতার মধ্যে কলহ;
> পারিবারিক সহায়তার অভাব ২ সন্তানকে প্রশংসা না করা;
> পরিবারে অসঙ্গতিপূর্ণ নিয়ম বা কোন নিয়ম না থাকা;
> সন্তানের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা;
> পরীক্ষার ফলাফলের কারণে চাপ সৃষ্টি করা;
> পরিবারের কারাে মানসিক সমস্যা;
> পিতা-মাতার বেকারত্ব, পিতা-মাতার মাদকাসক্তি ইত্যাদি।
সামাজিক পর্যায় ঝুঁকিমূলক উপাদানগুলাে হচ্ছে –
১. দারিদ্রতা, ২. বেকারত্ব, ৩. অপর্যাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থা, ৪. নিম্নমানের আবাসন, ৫. সাম্প্রদায়িক সংঘাত, ৬. উদ্বাস্তু/বাস্তুহারা, ৭. সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কার ইত্যাদি;
মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা
নিলীমার গল্প
নিলীমা ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং কিছুদিন পরেই তার এসএসসি পরীক্ষা। তাই সে অনেক চিন্তিত এবং কোনভাবেই পড়াশোনায় মনযোগ দিতে পারছে না। সে ভয় পাচ্ছে সে যদি এসএসসি পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট না করে, তাকে হয়তো এই বয়সেই বিয়ে দেয়া হবে। এই ধরনের ঘটনা সে তার মামাতো বোন এর সাথে ঘটতে দেখেছে, যে কিনা এখন খুবই কষ্টে আছেন।
একথা ভেবেই নিলীমা যখনই পড়তে বসে সে আতঙ্কিত বোধ করে, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না, প্রচুর ঘাম হয় এবং শারিরীকভাবে দূর্বল বোধ করে। এমনকি প্রায় রাতেই দূঃস্বপ্ন দেখে এবং রাতে ঘুমাতে পারে না। মেয়ের অবস্থা দেখে মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং তার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চান।
কিন্তু নিলীমা ভয়ে কিছুই বলে না। এ অবস্থায় নিলীমার মা তার স্কুলের শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেন এবং স্কুলে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা তা জানতে চান। শিক্ষক জানান যে নিলীমাকে আজকাল খুব অমনোযোগী এবং খুব ক্লান্ত দেখায়। নিলীমার মা ঐ শিক্ষককে তার মেয়ের সাথে আলাদা করে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
শিক্ষক তার সাথে আলাদা করে কথা বলেন এবং পরিক্ষা ভীতি কাটিয়ে কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে সে বিষয়ে সাহায্য করেন। পাশাপাশি বিয়ে নিয়ে তার ভয়ের ব্যপারে অভিভাবকের সাথে কথা বলতে উৎসাহিত করেন।
এরপর নিলীমা তার মাকে বিয়ে বিষয়ক ভয়ের বিষয়টি জানায়। তার মা ও বাবা বিয়ে না দেওয়ার বিষয়ে তাকে আশ্বস্ত করেন এবং তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও সে পরবর্তীতে কি করতে চায় সে বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা কেইসভিত্তিক কুইজ
প্রশ্ন ১: নিচের কোন কোন বিষয়গুলো নিলীমার মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রেখেছে (একাধিক উত্তর প্রযোজ্য)?
ক) পরিবারের সাথে কার্যকর যোগাযোগ ও বিচার না করে সহমর্মি মনোভাব;
খ) নিজের ভয় ও উদ্বেগ প্রকাশ না করে রাত জেগে থাকা;
গ) পরিবার ও বিদ্যালয়ে নির্ভয়ে মনের ভাব প্রকাশের পরিবেশ;
ঘ) পরিবার ও বিদ্যালয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক;
ঙ) বাল্য বিবাহের ভয়ে পড়াশোনা ভাল করতে চাওয়া;
চ) আত্নীয়দের মধ্যে বাল্য বিবাহ হওয়া;
ছ) পরীক্ষা ভীতি কাটাতে শিক্ষকের সাহায্য;
মানসিক স্বাস্থ্য কী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সংজ্ঞা অনুসারে মানসিক স্বাস্থ্য হলাে ভালাে থাকার অনুভূতি যেখানে-
ক. একজন ব্যাক্তি তার নিজের সামর্থ্য বা দক্ষতাগুলাে উপলব্ধি করতে পারে;
খ. জীবনের দৈনন্দিন চাপের সাথে মানিয়ে চলতে পারে;
গ. কার্যকর ও ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে পারে;
ঘ. নিজের চারপাশের পরিবেশে অবদান রাখতে পারে;
মনে রাখতে হবে যে,
১. শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য পরস্পর সম্পর্কিত;
২. মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে সামগ্রিক স্বাস্থ্যেরই একটি অংশ;
৩. মানসিক রােগ না থাকা মানেই এমন নয় যে একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য ভালাে আছে;
৪. মানসিক স্বাস্থ্য হলাে আবেগীয় ও আত্মিক সহনক্ষমতা, যা দুঃখ, কষ্ট ও হতাশার মধ্যে টিকে থেকে জীবন উপভােগ করতে সাহায্য করে;
৫. এটি সুস্থতার অনুভূতি, যার মূলে রয়েছে নিজের ও অন্যের প্রতি সম্মান ও সক্ষমতা সম্পর্কিত বিশ্বাস;
মডিউল-১: কুইজ
প্রশ্ন ১: নিচের তালিকা থেকে কোন কোনটি সুরক্ষা উপাদান তা চিহ্নিত করুন:
- মানসিক চাপ
- পারিবারিক সহিংসতা
- আত্ম-বিশ্বাস অর্জন
- একে অপরের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিমূলক আচরণ করা
- বেকারত্ব
- সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকা
- বুলিং
- সন্তানের শিক্ষকের/বিদ্যালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা
প্রশ্ন ২: নিচের তালিকা থেকে কোন কোনটি ঝুঁকি উপাদান তা চিহ্নিত করুন:
- পারিবারিক সহিংসতা
- মানসিক চাপ
- একে অপরের প্রতি সহমর্মী ও সহানুভূতিমূলক আচরণ করা
- আত্ম-বিশ্বাস অর্জন
- বুলিং
- সন্তানের শিক্ষকের/বিদ্যালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা
- বেকারত্ব
- সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকা
মডিউল-২: শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ (পর্ব-১)
মডিউল ২.৩: আক্রমণাত্মক আচরণ কেইস ভিত্তিক মূল্যায়ন কুইজ
প্রশ্ন ১: জুঁইও জাহানের ঘটনার আলোকে নিচের কোন কোন আক্রমণাত্বক আচরণ লক্ষণীয় হচ্ছে?
- খিটখিটে মেজাজ;
- নিয়ম ভঙ্গ করা;
- উদ্বিগ্নতা;
- প্রাণী বা অন্য কিছুর প্রতি শারীরিক শক্তি প্রদর্শন;
- নিজেকে/ অন্যকে আঘাত করা;
সবগুলোই সঠিক উত্তর হিসেবে মার্ক করুন;
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক ফার্স্ট এইড (পার্ট ১) প্রশিক্ষণ এর অন্যন্য মডিউলগুলো দেখুন–
[ninja_tables id=”3446″]