মডিউল ২: যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম এ জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর আলোকে যোগ্যতার ধারণা সম্পর্কে জানবো। এ পর্যায়ে প্রথমেই নিচের প্রশ্নটির উত্তর দিন এবং “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন। আপনার অগ্রগতি সংরক্ষণের জন্য উপরে “সমাপ্ত হিসেবে চিহ্নিত করুন” বাটনে ক্লিক করুন।
পূর্বের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক, শ্রেণি কার্যক্রম ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সাধারণত কী অর্জনের চেষ্টা করা হত?
সূচীপত্র
- 1 ভিডিও: যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম
- 2 পাঠ সহায়িকা: যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম
- 3 ২.৪.২ যােগ্যতার ধারণা
- 4 যােগ্যতার সংজ্ঞা
- 5 ২.৪.২.১ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যবোধ
- 6 ২.৪.২.২ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিভঙ্গি
- 7 ২.৪.২.৩ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা
- 8 সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা (Critical thinking skills)
- 9 সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা (Creative thinking skills)
- 10 সমস্যা সমাধান দক্ষতা (Problem solving skills)
- 11 সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা (Decision making skills)
- 12 যােগাযােগ দক্ষতা (Communication skills)
- 13 স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা (Self-management skills)
- 14 সহযােগিতামূলক দক্ষতা (Collaboration skills)
- 15 বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা (Global citizenship skills)
- 16 জীবিকায়ন দক্ষতা (Employability skills)
- 17 মৌলিক দক্ষতা (Foundational skills – Literacy, Numeracy)
- 18 ডিজিটাল দক্ষতা (Digital skills)
- 19 ২.৪.২.৪ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান
- 20 যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (স্ব-মূল্যায়ন ২)
ভিডিও: যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম
এই পাঠে আপনার জন্য রয়েছে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম বিষয়ক একটি ভিডিও লেসন। লেসনটি শেষ করতে সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখুন ও নির্ধারিত সময় (৩ঃ০৮মিনিট) অতিবাহিত করুন। ভিডিও দেখা শেষে পরবর্তী পাঠে যেতে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ!
পাঠ সহায়িকা: যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম
২.৪.১ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত যােগ্যতা নির্ধারণের প্রেরণা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
চেতনা হলাে আবেগিক ও সামাজিক বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, সময় ও পরিস্থিতিতে ব্যক্তিক মূল্যবােধ, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রবণতা, গুণাবলি, বৈশিষ্ট্য প্রভৃতির সমন্বয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সে অনুযায়ী আচরণ করতে প্রেরণা যােগায়।
সেই আলােকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শিক্ষাক্রম রূপরেখার সকল ধারণা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রমের মূল ভিত্তি হলাে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার ঘােষণাপত্রে উল্লিখিত চেতনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি।
এই শিক্ষাক্রম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার মূল ভিত্তিসমূহকে নিম্নবর্ণিতভাবে ধারণ করেছে-
মানবিক মর্যাদা: মানবিক মর্যাদা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের সম্মান এবং আত্মমর্যাদা যা স্থান, কাল, পরিস্থিতিভেদেও অক্ষুন্ন থাকে।
মানবিক মর্যাদা মানবাধিকারের মূল ভিত্তি যার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব এবং যা কোনােভাবেই স্থগিত করা যায় না। প্রতিটি মানুষের ন্যূনতম সম্মান এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনালব্ধ অঙ্গীকার।
সামাজিক ন্যায়বিচার: মানবিক মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে মানবাধিকার, সংবিধান, আইন, ধর্ম ও সংস্কৃতির আলােকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সামাজিক সহাবস্থান নিশ্চিত করাই সামাজিক ন্যায়বিচার।
শ্রেণি, ধর্ম, বর্ণ, গােত্র, লিঙ্গ, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার।
সাম্য: ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও শ্রেণিনির্বিশেষে সবাইকে সম্মান ও গ্রহণ করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রেক্ষিত বিবেচনায় সকলের জন্য সমান সুযােগ তৈরি করা এবং তা বজায় রাখাই হচ্ছে সাম্য।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিম্নবর্ণিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
৮ (১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।
জাতীয়তাবাদ
৯। ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।
সমাজতন্ত্র ও শােষণমুক্তি
১০ মানুষের উপর মানুষের শােষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
১১/ প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ নিশ্চিত হইবে ১২/* * * ১৩ (এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে৷
ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা
১২। ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য
(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,
(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,
(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলােপ করা হইবে।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিতে অনুপ্রাণিত উদ্যোগী ও উৎপাদনক্ষম জনগােষ্ঠীতে রূপান্তর করা প্রয়ােজন।
একইসাথে আত্মপরিচয় বহাল রেখে অভিযােজনে সক্ষম বিশ্বনাগরিক হিসেবে প্রস্তুত করার জন্যও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
শিক্ষাক্রম রূপরেখায় যােগ্যতার বিভিন্ন উপাদানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
২.৪.২ যােগ্যতার ধারণা
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মােকাবিলায় সক্ষম নাগরিক সমাজ গড়ে তােলার লক্ষ্যে বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশই যােগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করছে। বাংলাদেশেও শিক্ষাক্রম রূপরেখাটি যােগ্যতার ধারণাকে কেন্দ্র করেই উন্নয়ন করা হয়েছে।
সাধারণভাবে বলা যায়, জ্ঞান, দক্ষতা এবং ইতিবাচক মূল্যবােধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে অর্জিত হলে শিক্ষার্থীর মাঝে যােগ্যতা গড়ে উঠে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাড়ি কীভাবে চালনা করতে হয় তা যখন বই পড়ে বা শুনে বা দেখে একজন শিক্ষার্থী জানতে পারে, তার জ্ঞান অর্জিত হয়।
ঐ শিক্ষার্থী যদি গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশগুলাে হাতে-কলমে পরিচালনা করতে শেখে অর্থাৎ গাড়ি সামনে, পেছনে, ডানে বা বামে চালাতে পারে কিংবা ব্রেক করতে পারে, তবে তার দক্ষতা তৈরি হয়।
আর যদি সে গাড়ি চালিয়ে নিজের ও রাস্তার সকল মানুষ, প্রাণী ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষা করে গন্তব্যে পৌঁছানাের সক্ষমতা অর্জন করে, তবে ঐ শিক্ষার্থীর গাড়ি চালনা বিষয়ে যােগ্যতা অর্জিত হয়। এখানে জ্ঞান, দক্ষতা এবং মূল্যবােধ, দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে কাজ করেছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যােগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের ধারণা জনপ্রিয়তা পেলেও ‘যােগ্যতা’র সুনির্দিষ্ট বা একক কোনাে তত্ত্ব বা সংজ্ঞার্থ গড়ে ওঠেনি যার মাধ্যমে প্রচলিত সকল ধারণাকে একটি অভিন্ন ফ্রেমে বাঁধা যায় (Winterton et al., 2005)।
প্রেক্ষাপট যােগ্যতার ধারণাকে প্রভাবিত করে বলেই বিভিন্ন দেশের যােগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে যােগ্যতাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আবার শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে, কিংবা বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে যােগ্যতা সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে (Kennedy D & Hyland A, 2009)।
এমনকি নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক বৈচিত্র্য, কেননা কোনাে শিক্ষাবিদ বা গবেষক ‘যােগ্যতা বােঝাতে ব্যবহার করেছেন সক্ষমতা, আবার অনেকেই ব্যবহার করেছেন দক্ষতা বা Capacity, Capability, Performance Standard ইত্যাদি।
কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে যােগ্যতাকে খুবই সংকীর্ণ অর্থে, অর্থাৎ, যােগ্যতা আর দক্ষতাকে প্রায় সমার্থক করে দেখা হয়েছে। (Adam 2004, Brown and Knight 1995)।
অন্যদিকে ECTS (Europian Credit Transfer System) Users’ Guide 2009 সংজ্ঞা অনুযায়ী ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উন্নয়নের প্রয়ােজনে শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে জ্ঞান, দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পদ্ধতিগত সক্ষমতা প্রয়ােগের প্রমাণিত ক্ষমতাই যােগ্যতা।
নার্সিং পেশায় সেবা দেয়ার সময় জ্ঞানমূলক, আবেগীয় ও মনােপেশিজ দক্ষতাসমূহ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারাই যােগ্যতার পরিচায়ক (Miller et al, 1988)।
পেশাগত ক্ষেত্রে যােগ্যতা হলাে জ্ঞান, মনােভাব এবং আচরণের এমন এক প্যাটার্ন যা একত্রে কোনাে কাজ সম্পাদনের সামর্থ্য তৈরি করে (Neary, 2002)।
শুধু জ্ঞান আর দক্ষতা নয় বরং মূল্যবােধ, সূক্ষ্ম চিন্তন, পেশাগত বিচার-বিবেচনা, মনােভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজ ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বের সন্নিবেশনও অনেক ক্ষেত্রে যােগ্যতার অন্তর্ভুক্ত।
একইভাবে দেশভেদেও যােগ্যতার ধারণায় পার্থক্য দেখা যায়। The Higher Education and Training Awards Council of Ireland (HETAC)-এর মতে, বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে জ্ঞান ও দক্ষতার সৃজনশীল ও কার্যকর প্রদর্শন এবং প্রয়ােগ করতে পারাকেই যােগ্যতা বলে।
এ কাউন্সিল আরাে মনে করে যে, শিক্ষার্থীর নিজের দুর্বলতা নিজেই চিহ্নিত করতে পারা এবং সে অনুযায়ী নতুন কিছু শিখতে পারাও যােগ্যতা।
২০০০ সালে Tuning Educational Structures in Europe নামক প্রকল্প ইউরােপের শিক্ষার ক্ষেত্রে যােগ্যতার সংজ্ঞার্থ নির্ধারণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেছে যে, যােগ্যতা হচ্ছে জ্ঞান, অনুধাবন, দক্ষতা এবং সক্ষমতার এক সমন্বয়।
আবার ইংল্যান্ডে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে যােগ্যতাকে কর্মসম্পাদন ও পেশাগত ভূমিকা পালনের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যােগ্যতা বলতে দক্ষতা, জ্ঞান ও ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন : প্রবণতা, মনােভাব, আত্ম-ধারণা প্রভৃতিকে বােঝানাে হয়েছে (Van der Klink and Boon, 2002)।
অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষাক্রমে যােগ্যতাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘Capability’ হিসেবে। এই শিক্ষাক্রমে ধরে নেয়া হয়েছে জ্ঞান, দক্ষতা, আচরণ আর স্বভাব বা অন্তর্গত বিন্যাস (Dispositions)-এর সম্মিলনে গড়ে ওঠে যােগ্যতা।
শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এবং বিদ্যালয়ের বাইরে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যখন জটিল ও পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কার্যকর ও যথার্থভাবে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়ােগ করে তখন যােগ্যতা অর্জন করে।
জার্মানিতে যােগ্যতাকে গ্রহণ করা হয়েছে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কোনাে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য অর্জিত জ্ঞানমূলক ক্ষেত্রের পুনর্বিন্যাস করার সক্ষমতাকে।
অন্যদিকে, এস্তোনিয়া তার শিক্ষাক্রমে যােগ্যতার সাধারণ ধারণাকে (অর্থাৎ জ্ঞান, দক্ষতা, মনােভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি, এবং মূল্যবােধ-সংস্কৃতি) নিজস্ব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী গ্রহণ 76562 (Estonia, 2014)| vr attomia ভিন্ন ভিন্ন ধারণায়নের মধ্যেও যােগ্যতা সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে, তা হলাে, শিক্ষার্থী যদি কোন প্রেক্ষাপটে প্রয়ােজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও মনােভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবােধ, নৈতিকতা প্রভৃতির সন্নিবেশ ঘটিয়ে কর্মসম্পাদনে পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারে তবে তাকে ঐ বিশেষ প্রেক্ষাপটে যােগ্যতাসম্পন্ন মানুষ বলা যায় (Kennedy D & Hyland A, 2009)।
যােগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে যে ধারণাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলাে নিজস্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনা।
কেননা শিক্ষার্থীদেরকে নিজস্ব প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্ত করা না হলে তাদের মধ্যে যেকোনাে যােগ্যতা গড়ে তােলাই দুরূহ হয়ে যেতে পারে (Klieme E. et al. 2008)।
উপযুক্ত বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে, যােগ্যতার ধারণাসমূহের ভেতর কিছু উপাদান সার্বজনীন; যেমন : জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবােধ প্রভৃতি, আবার কিছু উপাদান বিভিন্ন দেশ নিজস্ব প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সংযুক্ত করেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যােগ্যতাকে চারটি উপাদানের সমন্বয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সেগুলাে হলাে: মূল্যবােধ, দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও জ্ঞান।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযােজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবােধ, ও
দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে এই শিক্ষাক্রম দৃষ্টিভঙ্গি রূপরেখায় যােগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বিবৃত উপাদানগুলাের আন্তঃসম্পর্ক সরলরৈখিক নয় বরং জটিল বহুমাত্রিক।
যােগ্যতার সংজ্ঞা

উপরােক্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে যােগ্যতা হলাে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযােজনের দক্ষতা জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবােধ, ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতা।
যােগ্যতার ধারণার আলােকে তার উপাদানসমূহকেও সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যেন তা ভালােভাবে উপলব্ধি করে শিক্ষাক্রমের মূল যােগ্যতা, শিখনক্রম, শিখন-শেখানাে কৌশল, শিখন-শেখানাে সামগ্রী ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে প্রতিফলিত করা যায়।
২.৪.২.১ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যবোধ
মূল্যবােধ হচ্ছে এক ধরনের নীতি বা বিশ্বাস (Guiding principles/beleifs) যা যেকোনাে ধরনের সিদ্ধান্ত, সমাধান বা অগ্রাধিকার নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, জাতীয় এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসের দীর্ঘ দিনের চর্চার মধ্য দিয়ে মূল্যবােধ গড়ে ওঠে যা পরবর্তীকালে অনুসৃত হয়।
জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নের সঙ্গেও মূল্যবােধ ওতপ্রােতভাবে জড়িত এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাও বিদ্যমান। ধরন অনুযায়ী মূল্যবােধকে বিভিন্নভাবে গুচ্ছবদ্ধ করা যায় যেমন- ব্যক্তিগত, সামাজিক, মানবিক, ধর্মীয় ইত্যাদি।
শিক্ষায় মূল্যবােধের চর্চা, অনুসরণ ও উন্নয়ন জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে। যেহেতু মূল্যবােধ সকল ধরনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপকেই প্রভাবিত করতে পারে সেহেতু শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে নিজ দেশ ও সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত ইতিবাচক মূল্যবােধ তৈরি, চর্চা, অনুসরণকে উৎসাহিত করা হবে –
যা শিক্ষাক্রমের রূপকল্প অর্জনে ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে হলে সেগুলাে অর্জন করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সম্পর্কিত মূল্যবােধের চর্চার মাধ্যমে।
2 মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে তার সক্ষমতা বা যােগ্যতায় রূপান্তরিত হয় এবং এই উপাদানগুলাে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করে কীভাবে আচরণের দ্বারা প্রকাশ পায়, এই বিষয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ও মানব উন্নয়নে বহুল ব্যবহৃত একটি ত্বত্ত্ব (The theory of planned behavior-Icek Ajzen, 1991) প্রচলিত আছে। মানুষের জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য (যেমনঃ বয়স, লিঙ্গ) নির্বিশেষে অর্জিত জ্ঞান (Knowledge) ও এর প্রয়ােগ অভিজ্ঞতা (Application Experience) তিন ধরনের বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটায়: ১. সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সুনির্দিষ্ট আচরণ করার দৃষ্টিভঙ্গি (Attitude) তৈরি করে; ২. নিজের কাজ করা বা সমস্যা সমাধানের সক্ষমতার ওপরে আত্মবিশ্বাস (Self-efficacy Belief) প্রস্তুত করে ৩. রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক ও গােষ্ঠীগত আদর্শ (Norm) বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তার মাঝে মূল্যবােধ ও আদর্শগত বিশ্বাস (Normative Belief) তৈরি হয়। জ্ঞান ও প্রয়ােগ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যদি এই তিনটি উপাদানের মাঝে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়, তবে মানুষের মাঝে পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক আচরণ প্রকাশের সামষ্টিক বিশ্বাস তৈরি হয় এবং তা সঠিকভাবে প্রয়ােগের চর্চা করার সক্ষমতাও পরিলক্ষিত হয়।
এই মূল্যবােধের উৎস হলাে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পরিচয় ও ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চা, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট এবং বৈশ্বিক মূল্যবােধ। এই পরিপ্রেক্ষিতে যেসব মূল্যবােধ চর্চার বিষয় এই শিক্ষাক্রম উন্নয়নে বিবেচিত হয়েছে, সেগুলাে হলাে:
সংহতি : এক হয়ে থাকার মানসিকতা। ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও শ্রেণিভেদ সত্ত্বেও ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও অগ্রাধিকারকে পেছনে রেখে কতগুলাে সামষ্টিক ইচ্ছা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং মানবিক মূল্যবােধের পরিপ্রক্ষিতে সকলে মিলে বড় কোনাে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা।
দেশপ্রেম : ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে ওঠে জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজ দেশের সার্বিক কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত রাখাই হচ্ছে দেশপ্রেম।
সম্প্রীতি : ভিন্নতা, বৈচিত্র্য ও শ্রেণিভেদের মধ্যেও বিদ্যমান দৃঢ়তাসমূহের সম্মিলনে সর্বোচ্চ ঐক্য প্রদর্শন এবং বজায় রাখাই হচ্ছে সম্প্রীতি।
পরমতসহিষ্ণুতা : ভিন্নমত বা ভিন্ন চিন্তাধারাকে সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা প্রয়ােগের মাধ্যমে গ্রহণ বা বর্জনের স্বাধীনতা এবং এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহনশীলতা প্রদর্শন হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের অনুসারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা প্রদর্শন হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা।
শ্রদ্ধা : স্থায়িত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ সহাবস্থানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবােধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষসহ সকল মানুষের বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র ও গুণাবলির আলােকে পারস্পরিক ইতিবাচক অনুভূতির প্রকাশই শ্রদ্ধা বা সম্মান।
সহমর্মিতা : অন্যের মনের অবস্থা ও অনুভূতি আন্তরিকভাবে অনুধাবন করে তার সঙ্গে একাত্ম হওয়া
শুদ্ধাচার : শুদ্ধাচার মানে নিজের কাছে দায়বদ্ধ থেকে যেকোনাে পরিস্থিতিতে নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনাে পরীবিক্ষণ ছাড়াই নিজ দায়বদ্ধতা থেকে নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়াই শুদ্ধাচার।
চেতনা ও মূল্যবােধ বিমূর্ত অনুভূতি, বােধ বা ধারণা। এগুলাের অনুসরণ ও চর্চা হলাে কিনা তা বােধগম্যতার সূচক হল মানুষের মাঝে কী কী গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্য অর্জিত হল তা পর্যবেক্ষণ ও অনুধাবন করা।
এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সমাপনান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলি প্রত্যাশা করা হয়েছে যা অর্জন করলে চেতনা ও মূল্যবােধের চর্চার প্রতিফলন অনুভব করা যাবে।
গুণাবলি | বর্ণনা |
---|---|
সততা | একটি নৈতিক গুণ যা সত্যবাদিতা ও ন্যায়পরায়ণতার চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করে। |
উদ্যম | দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা। |
গণতান্ত্রিকতা | পরমতসহিষ্ণু এবং সকলের মত প্রকাশের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল। |
অসাম্প্রদায়িকতা | নিজ সম্প্রদায়সহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। |
উদ্যোগ | কোনাে কাজ বা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হওয়া ও শেষ পর্যন্ত অনুপ্রাণিত থাকা। |
ইতিবাচকতা | কোনাে কাজ, কথা, ঘটনা বা বিষয়ের ভাল দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া। |
নান্দনিকতা | সৃজনশীল কাজের সৌন্দর্য উপলব্ধি করে তার চর্চা করার মননশীল মনােভাব পােষণ করা। |
মানবিকতা | মানুষ ও সৃষ্টি জগতকে ভালবাসা, পরিচর্যা করা, সংরক্ষণ করা ও নিরাপত্তা প্রদানে সচেষ্ট হওয়া। |
দায়িত্বশীলতা | সকল দায়িত্ব ও কাজ সময়মত, গুরুত্ব সহকারে ও যথাযথভাবে সম্পাদন করা। |
২.৪.২.২ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত দৃষ্টিভঙ্গি
শিক্ষাক্রম রূপরেখায় দৃষ্টিভঙ্গি বলতে শিখনের মাধ্যমে অর্জিত প্রবণতা বা সক্ষমতা, যা সচেতন বা অসচেতনভাবে কোনাে বিষয়কে মূল্যায়ন করা অথবা কোনাে ধারণা, ব্যক্তি বা পরিস্থিতির প্রতি নির্দিষ্ট উপায়ে সক্রিয় হওয়া বা সাড়া দেওয়াকে বােঝানাে হয়েছে।
দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করে মূল্যবােধ ও বিশ্বাসের ওপর যা তার আচরণকে প্রভাবিত করে। শিক্ষাক্রম রূপরেখায় দৃষ্টিভঙ্গির তিনটি উপাদানকে বিশেষভাবে গুরুত্বারােপ করা হয়েছে –
- ব্যক্তিগত বিশ্বাস
- ইতিবাচক সামাজিক রীতি সম্পর্কিত বিশ্বাস
- আত্মবিশ্বাস
২.৪.২.৩ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা
দক্ষতা হচ্ছে এক ধরনের সক্ষমতা (Ability or Capability) যা সুচিন্তিত, পদ্ধতিগত এবং স্থায়ী প্রচেষ্টার (Efforts) মাধ্যমে সাবলীল বা অভিযােজনক্ষম কার্যক্রম বা ক্রিয়াকলাপ দ্বারা অর্জন করা যায়।
কার্যক্রম বা ক্রিয়াকলাপের ধরন, লক্ষ্য বা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে দক্ষতাও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। যেমন কোনাে ধারণা নিয়ে কার্যক্রম হলে তা যেমন জ্ঞানগত দক্ষতা, আবার বস্তু নিয়ে হলে তা ব্যাবহারিক বা কারিগরি দক্ষতা এবং মানুষ বা সমাজ নিয়ে হলে তা সামাজিক, মনােসামাজিক বা আবেগীয় দক্ষতা। দক্ষতাকে কোন প্রেক্ষাপটে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্নভাবে ধারণায়ন। (Conceptualization) করা হয়।
যেমন : শিক্ষাক্রমে দক্ষতা হচ্ছে যােগ্যতার (Competencies) সামগ্রিক ধারণার একটি অংশ। আবার জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবােধ ও দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন পরস্পরের উপর নির্ভরশীল।
যেমন: জ্ঞান অর্জনের জন্য জ্ঞানগত দক্ষতার প্রয়ােজন আবার মূল্যবােধ চর্চার জন্য মনােসামাজিক ও আবেগিক দক্ষতার প্রয়ােজন। একইভাবে ব্যাবহারিক দক্ষতা বা আবেগীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য জ্ঞান অর্জন এবং মূল্যবােধ চর্চা জরুরি।
বৃহত্তর পরিসরে সকল ধরনের দক্ষতাকে মূলত তিনটি গুচ্ছে ভাগ করা যায়-
১. মৌলিক দক্ষতা (Foundational skills) : যে দক্ষতাসমূহ অন্যান্য দক্ষতা, যােগ্যতা অর্জনের জন্য অপরিহার্য, যেমন : সাক্ষরতা (Literacy, Numeracy), ডিজিটাল সাক্ষরতা (Digital literacy) ইত্যাদি।
২. রূপান্তরযােগ্য দক্ষতা (Transferable skills) : যে দক্ষতাসমূহ প্রেক্ষাপট ও সময় অনুযায়ী রূপান্তর করে প্রয়ােগ করা যায় এবং যা সময়ের সঙ্গে টিকে থাকতে সহায়তা করে, যেমন : সূক্ষ্ম চিন্তন, সৃজনশীল চিন্তন, সমস্যা সমাধান ইত্যাদি।
৩. জীবিকা-সংশ্লিষ্ট দক্ষতা (Livelihood related skills) : যে দক্ষতাসমূহ মানুষকে কোনাে কাজ করতে পারদর্শী করে গড়ে তােলে। যেমন : বৃত্তিমূলক (অকুপেশনাল) বা ট্রেডভিত্তিক দক্ষতা।
এখানে উল্লেখ্য যে, গুচ্ছসমূহের দক্ষতাকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা করা যায় না। এদের মধ্যেও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা যেমন নিবিড়ভাবে থাকে তেমনি এক গুচ্ছের দক্ষতা অন্য গুচ্ছেও প্রবেশ করতে পারে।
শিক্ষায় দক্ষতার ধারণা অনেক পুরােনাে হলেও সময় পরিবর্তনের সাথে যুগের চাহিদা অনুযায়ী তার নতুন ধারণা ও সংজ্ঞায়ন করা হয়।
বিশেষ করে যােগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমে যােগ্যতার একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে দক্ষতার সংজ্ঞা ও অর্জনের উপায় স্পষ্ট করা প্রয়ােজন।
এক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত ডেলর কমিশনের (১৯৯৬) সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষার চারটি স্তম্ভ বিভিন্ন দক্ষতাকে সংজ্ঞায়িত ও গুচ্ছবদ্ধ করতে সহায়তা করেছে।
ডেলর কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দক্ষতাসমূহ নিম্নলিখিতভাবে গুচ্ছবদ্ধ করা হয়েছে-

তাছাড়া, OECD ২০৩০ সালের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা রূপরেখায় দক্ষতাসমূহকে মূলত তিনটি গুচ্ছে সংজ্ঞায়িত করেছে।
১. জ্ঞানগত এবং চিন্তা নিয়ে চিন্তা করার দক্ষতা (Cognitive and metacognitive skills)
২. সামাজিক ও আবেগীয় দক্ষতা (Social and emotional skills)
৩. বাস্তব বা ব্যবহারিক দক্ষতা (Physical and practical skills)
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাের্ড (এনসিটিবি) পরিবর্তিত জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ও অঙ্গীকার এবং একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে ধারাবাহিক কারিগরি অনুশীলনের মাধ্যমে একটি সমন্বিত দক্ষতা রূপরেখা প্রণয়ন করেছে।
এই দক্ষতা রূপরেখার বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি একেবারেই বাংলাদেশের নিজস্ব প্রেক্ষাপটভিত্তিক, এবং এই দেশের তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে ও ভবিষ্যতে যেসকল চ্যালেঞ্জ ও বাধা মােকাবেলা করছে বা করবে তা বিবেচনায় নিয়ে একে ভবিষ্যম্মুখী করে প্রণয়ন করা হয়েছে।
উপযুক্ত আন্তর্জাতিক ধারণায়নসমূহের প্রতিফলনে এবং এনসিটিবি প্রণীত দক্ষতা রূপরেখা অনুসরণে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় নিম্নবর্ণিতভাবে দক্ষতাসমূহকে গুচ্ছবদ্ধ করা হয়েছে।

বর্ণিত দক্ষতাসমূহ যেন শিখনক্রম, যােগ্যতা, শিখন-শেখানাে কৌশল এবং মূল্যায়ন কৌশলে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় সেজন্য গুচ্ছভিত্তিক দক্ষতাসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলাে-
সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা (Critical thinking skills)
কোনাে বিষয় অনুপুঙ্খভাবে অনুধাবন বা সমস্যা সমাধান করার জন্য তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ ও ব্যবহার করার বিশেষ ধরনের পদ্ধতিগত চিন্তন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারাকে সূক্ষ্ম চিন্তন দক্ষতা (Critical Thinking) নামে অভিহিত করা হয়।
সূক্ষ্ম চিন্তন করার সময় মানুষ চিন্তনের কতগুলাে শৃঙ্খলাবদ্ধ ধাপ অনুসরণ করে কোনাে একটি সমাধান বা সিদ্ধান্তে পৌছায়।
এমন দক্ষতায় পারদর্শী শিক্ষার্থীরা যেকোনাে জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করার সময় অনুসন্ধানী দৃষ্টিকোণ থেকে একাধিক চিন্তন দক্ষতাকে সমন্বয় করে কাজ করে;
যেমন: বিষয়টির ধরন অনুযায়ী চিন্তার কৌশল নিয়ে চিন্তা করা, অনুসন্ধানী প্রশ্ন করার কৌশল অনুসরণ, বিশ্লেষণ-সংযােজন ও যৌক্তিকতা নির্ধারণ ইত্যাদি। এর ফলে জটিল বিষয় নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়।
সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা (Creative thinking skills)
গতানুগতিক চিন্তাভাবনার বাইরে নিজস্ব মতামতের মাধ্যমে নতুন ধারণা সৃষ্টি ও বাস্তবায়নের দক্ষতাই সৃজনশীল চিন্তন দক্ষতা।
এমন দক্ষতায় পারদর্শী শিক্ষার্থীরা কোনাে বিষয় নিয়ে কাজ করার সময় গতানুগতিক চিন্তা ধারার পরিবর্তে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে;
এর মাধ্যমে যেমন নতুন কৌশল ও উপায় বেরিয়ে আসে অন্য দিকে তেমনি নতুন পথের এবং সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। পরিবর্তনশীল বিশ্বে এমন দক্ষতাই ব্যক্তি ও সমাজকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
সমস্যা সমাধান দক্ষতা (Problem solving skills)
সমস্যা চিহ্নিত করে পদ্ধতিগতভাবে সে সমস্যার কার্যকরী সমাধানে উপনীত হওয়ার দক্ষতাই সমস্যা সমাধান দক্ষতা। সমস্যা সমাধানের নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চর্চা করার মধ্য দিয়ে এই দক্ষতা শাণিত হয়।
এক্ষেত্রে সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে তা বিশ্লেষণ করা, সে অনুযায়ী সমাধানের সম্ভাব্য উপায়সমূহ যাচাই বাছাই করে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা (Decision making skills)
পরিস্থিতি অনুধাবন করে কোনাে সমস্যার তথ্যভিত্তিক একাধিক সমাধানে উপনীত হওয়া এবং যৌক্তিকভাবে একটি সমাধান বাছাই করাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ দক্ষতা।
অনেকেই যৌক্তিক চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণে যারা পারদর্শী তারা সুনির্দিষ্টভাবে বিষয়টিকে চিহ্নিত করে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেন, এরপর সম্ভাবনা ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সম্ভাব্য উপায়সমূহ যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন।
যােগাযােগ দক্ষতা (Communication skills)
কার্যকরভাবে ভাবের আদান-প্রদান, তথ্য বা মতামত গ্রহণ ও প্রকাশ করার দক্ষতাই যােগাযােগ দক্ষতা। আমরা বিভিন্ন ভাষিক ও অভাষিক (মৌখিক ও লিখিত বার্তা, অভিব্যক্তি, সংকেত ইত্যাদি) উপায় ব্যবহার করে তথ্য, মতামত, অনুভূতি ইত্যাদি গ্রহণ ও প্রকাশ করি।
এক্ষেত্রে সক্রিয় শ্রবণ, উপস্থাপন শৈলি, আগ্রহের সঙ্গে বার্তা দেয়া-নেয়ার দক্ষতার সমন্বিত প্রয়ােগ যােগাযােগ দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে।
স্ব-ব্যবস্থাপনা দক্ষতা (Self-management skills)
সমৃদ্ধ জীবন ও উন্নত সমাজ গঠনে ব্যক্তির বিভিন্ন দক্ষতার পাশাপাশি প্রয়ােজন সু-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কার্যকরভাবে আত্ম-পরিচর্যা বা নিজেকে ইতিবাচকভাবে পরিচালিত করার সক্ষমতা অর্জন করে ভালাে থাকা।
এজন্যে বিশেষ কিছু দক্ষতার সমন্বয় প্রয়ােজন, যেমন : আত্মসচেতনতা ও আত্ম-বিশ্লেষণ করার দক্ষতা, আবেগিক বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক বুদ্ধিমত্তা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ন্ত্রণ, পারস্পরিক সম্পর্কের ফলপ্রসূ ব্যবহার, প্রাত্যহিক জীবনযাপন দক্ষতা এবং সর্বোপরি সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা।
সহযােগিতামূলক দক্ষতা (Collaboration skills)
কোনাে কাজ সম্পাদনে ও উৎকর্ষ অর্জনে পারস্পরিক সহযােগিতা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্যে প্রয়ােজন সমমনােভাব ও দলগত চেতনা সৃষ্টি করা।
বৈচিত্র্যকে মূল্য দিয়ে বিভেদ কমিয়ে আনা, সহযােগিতার ক্ষেত্র ও কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট করা এবং কার্যকর যােগাযােগের মাধ্যমে সহযােগিতার পরিধি প্রসারিত করা মূলত এই দক্ষতার অন্তর্গত।
বিশ্ব নাগরিকত্ব দক্ষতা (Global citizenship skills)
Global citizenship skills বিশ্ব নাগরিকত্ব হলাে এমন একটি ধারণা, যা মানুষকে জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট উপলব্ধি করে সেখানে তার অবস্থান সুনির্দিষ্ট করতে সহায়তা করে।
বিশ্ব নাগরিকত্বের দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি জাতীয়তাবােধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার নিজ পরিসর, সমাজ, সংস্কৃতি তথা দেশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে একটি যােগাযােগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করেন যা বৈষম্যহীন বিশ তৈরিতে এবং মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে।
বিশ্ব নাগরিকত্বের দক্ষতাসম্পন্ন প্রজন্ম, দেশ তথা বিশ্বের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
বৈশ্বিক নাগরিকত্ব মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়ে সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, সহনশীল, একীভূত, সুরক্ষিত এবং টেকসই বিশ্ব গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে।
টেকসই উন্নয়নমুলক শিক্ষা (Education for Sustainable Development-ESD) কৌশল অনুসরণ করে বিশ্ব নাগরিকত্বের দক্ষতাসম্পন্ন প্রজন্ম তৈরি করতে হবে।
জীবিকায়ন দক্ষতা (Employability skills)
কর্মজগতের জন্য প্রস্তুত হতে এবং নিজেকে পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে যােগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে যে দক্ষতাসমূহ প্রয়ােজন তাই হচ্ছে জীবিকায়ন দক্ষতা।
কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতার পাশাপাশি নিজের কাজ নিজে করতে পারার দক্ষতা, আর্থিক সাক্ষরতা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দক্ষতা, ব্যবসায়িক যােগাযােগ ও উদ্যোক্তা হওয়ার দক্ষতা, কর্মক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা, নিরাপত্তা ও চাকুরি অনুসন্ধানের দক্ষতা, ভবিষ্যত কর্মদক্ষতা সুনির্দিষ্ট পেশায় নিয়ােগের যােগ্যতা বৃদ্ধি করে।
এসকল দক্ষতাসমূহের উৎকর্ষ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন কর্মে নিয়ােজিত হওয়ার সুযােগ সৃষ্টি করে।
মৌলিক দক্ষতা (Foundational skills – Literacy, Numeracy)
মৌলিক দক্ষতা বলতে পঞ্চ-ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ উপলব্ধি করে পড়তে, বলতে ও লিখতে বা প্রকাশ করতে, পরিমাপ ও হিসাব কষতে এবং বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে অনুসন্ধান করতে যেসব দক্ষতার প্রয়ােজন হয় এক কথায় সেগুলােকেই বােঝায়।
এছাড়া দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে যেসকল মৌলিক দক্ষতার প্রয়ােজন তার মধ্যে গুরত্বপূর্ণ হলাে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সাক্ষরতা।
ডিজিটাল দক্ষতা (Digital skills)
বর্তমান সময়ের প্রযুক্তি নির্ভর সমাজের উপযুক্ত সদস্য হিসেবে জীবনধারণ করতে ডিজিটাল দক্ষতা অত্যাবশ্যক। ডিজিটাল দক্ষতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ তথ্য ও মিডিয়া সাক্ষরতা, তবে এর পরিধি আরাে ব্যাপক।
একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র প্রযুক্তির ভােক্তা না হয়ে উদ্ভাবক হিসেবে গড়ে তােলার লক্ষ্যে এই দক্ষতাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে।
বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে সেই প্রক্রিয়া অনুধাবন করে বাস্তব সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার, এবং প্রয়ােজনে নতুন ডিজিটাল সলিউশন পরিকল্পনা, ডিজাইন ও বাস্তবায়নে যেসকল দক্ষতা প্রয়ােজন সেগুলাে ডিজিটাল দক্ষতার মধ্যে পড়ে।
একইসাথে, বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তির কার্যকারিতা যাচাই করতে পারা, বিভিন্ন প্রয়ােজনে দক্ষতার সঙ্গে উপযুক্ত প্রযুক্তির যথাযথ, সৃজনশীল ও দায়িত্বশীল ব্যবহার করতেও ডিজিটাল দক্ষতা প্রয়ােজন।
২.৪.২.৪ শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান
জ্ঞান হচ্ছে কোনাে বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত তথ্য, ধারণা বা তত্ত্ব। জ্ঞান যেমন তত্ত্বীয় ধারণা নির্ভর, তেমনি অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোনাে কার্যক্রম পারদর্শিতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারার বাস্তব অনুধাবননির্ভরও।
জ্ঞানকে প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। OECD দেশসমূহে ব্যবহৃত জ্ঞানের সংজ্ঞা ও ধরন অনুসরণে এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় জ্ঞানকে চারটি ধরণে বিভাজিত করা হয়েছে।
১. বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান (Disciplinary knowledge) : বিষয়ভিত্তিক ধারণা ও বিষয়বস্তু
২. আন্তঃবিষয়ক জ্ঞান (Inter-disciplinary knowledge) : একটি বিষয়ের ধারণা ও বিষয়বস্তুর সংগে অন্য বিষয়ের ধারণা ও বিষয়বস্তুর সংযােগ করতে পারা
৩. বিষয়ভিত্তিক বিশেষ জ্ঞান (Epistemic knowledge) : বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের কাজ ও চিন্তা বুঝতে পারা।
৪. পদ্ধতিগত জ্ঞান (Procedural knowledge): কোন কাজ ধাপে ধাপে কীভাবে করতে হয় সে সম্পর্কিত জ্ঞান।
যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (স্ব-মূল্যায়ন ২)
এই পর্যায়ে মডিউলের বিষয়বস্তুর উপরে একটি স্ব-মূল্যায়ন (কুইজ) সংযুক্ত রয়েছে যেখানে আপনাকে মডিউলের বিষয়বস্তুর উপরে একটি প্রশ্ন করা হবে। প্রশ্নটি সঠিকভাবে উত্তর করতে পারলেই কেবল সামনে অগ্রসর হতে পারবেন। সঠিকভাবে উত্তর করতে না পারলে ভিডিও এবং পাঠসহায়িকা পুনরায় দেখে স্ব-মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
প্রশ্ন ১. নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী নিচের কোনটি যোগ্যতা?
ক. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যবহার সম্পর্কে বলতে পারা।
খ. বাস্তব জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারা।
গ. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার জেনে তা প্রয়োগ করতে পারা।
ঘ. বাস্তব জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের করতে পারা।
আপনি চাইলে স্বপ্ন ইশকুল ফেসবুক পেইজে মেসেজ করে বিষয়টি জানালে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনাকে সহযোগীতা করার সেই সাথে নিত্য নতুন ভিডিও পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে নিন।
আপনার জন্য আরও কিছু তথ্য: