শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ (পর্ব-১) এ আলোচনা করা হয়েছে- উদ্বেগ, বিষন্নতা ও আক্রমণাত্মক আচরণ নিয়ে। এই মডিউল সম্পন্ন করলে আপনি – মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলাে ব্যাখ্যা করতে পারবেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলাে চিহ্নিত করতে পারবেন।
তাহলে চলুন মডিউল-২: শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণসমূহ (পর্ব-১) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। এর আগে আমরা জেনেছি মানসিক স্বাস্থ্য কী ও প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব বিষয়ে। চাইলে পড়ে নিতে পারেন।
সূচীপত্র
উদ্বেগ কি?

উদ্বেগ হচ্ছে চাপের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এটি আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে এবং আমাদের প্রস্তুত হতে সহায়তা করে। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট মাত্রার উদ্বেগ আমাদের জন্য ভালাে।
কিন্তু উদ্বেগ যখন নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে তখন অনুভূতিগুলাে আলাদা হয়, যা অনেক সময় মােকাবেলা করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না।
উদ্বেগজনিত সমস্যার লক্ষণ
ক. ভয়ে বা আতঙ্কে থাকা
খ. ক্লান্তি অনুভব করা
গ. কোনাে কারণ ছাড়া ঘুম না হওয়া
ঘ. মনে রাখতে না পারা
ঙ. মনােযােগ দিতে না পারা
চ. পরীক্ষা ভীতি/ অহেতুক ভীতি
ছ. অন্যদের কাছ থেকে আলাদা মনে করা
জ. কোন বিশেষ বস্তু বা পরিস্থিতির প্রতি ভয়
ঝ. বমি বমি ভাব হওয়া।
বিষন্নতা কি
বিষন্নতা হচ্ছে এক ধরণের অবস্থা যা আমাদের মেজাজ, চিন্তা, স্মৃতি, ঘুম এবং কাজ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। চিকিৎসামূলক ভাবে বিষন্নতাকে মানসিক এবং আচরণগত ব্যাধি হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। বিষন্নতার মূল উপসর্গ হচ্ছে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা এবং নির্দিষ্ট কিছু কর্মকান্ডে আনন্দের অনুভূতি হারানাে।
বিষন্নতার লক্ষণ
i. সদা মন খারাপ থাকা;
ii. আনন্দ অনুভব করতে না পারা;
iii. বেশি বা কম খাওয়া;
iv. ঘুমজনিত সমস্যা;
v. হঠাৎ ওজন বেড়ে/ কমে যাওয়া;
vi. অল্পতে বিরক্ত হওয়া খিটখিটে মেজাজ নিজেকে এবং অন্যকে দোষারােপ করা;
vii. নিজেকে গুটিয়ে নেয়া/ কারাে সাথে কথা না বলা/ একাকী থাকা;
viii. নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা;
ix. খাবারে অরুচি বা অনীহা;
x. অতিরিক্ত হতাশা বােধ করা;
xi. নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা;
xii. অমনােযােগিতা;
xiii. একাকীত্ব বােধ করা;
xiv. আত্মহত্যার চিন্তা/ প্রবণতা;
xv. ক্লান্তি অনুভব করা;
xvi. নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মানাে;
xvii. শােকানুভূতির প্রকাশ দীর্ঘতর হওয়া এবং শােক হতে বের না হতে পারা।
মডিউল ২.৩: আক্রমণাত্মক আচরণ
জুঁই ও জাহানের ঘটনাঃ
জুঁই এবং জাহান দুই বান্ধুবী। তারা বিদ্যালয়ের পিছনে গোল্লাছুট খেলছিল। জুঁই খেলার একটি নিয়ম ভঙ্গ করে এবং এতে জাহান জুঁইয়ের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে ও সে তার সমর্থনে অতিরিক্ত যুক্তি দেখাতে থাকে।
ফলে জুঁই, জাহানের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং শারীরিক শক্তি প্রদর্শন করে। ফলে জাহান, জুঁইকে হুমকি দিতে থাকে। জাহান বাড়ি ফিরে গেলে তার মা স্কুলে আজকে কি কি হয়েছে জানতে চাইলে তার সাথে রাগারাগি করে।
কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল জাহান তার পোষা বিড়ালকে অনেক জোরে কয়েকবার লাথি মারে। পরেরদিন স্কুলে গেলে জাহান ভয় পায় তাকে নিয়ে সবাই বাজে কথা বলবে, কিন্তু জাহান জুঁইকে নিয়ে অন্য সহপাঠিদের কাছে নেতিবাচক মন্তব্য এবং হাসাহাসি করে।
জুঁই এবং জাহানের মধ্যে প্রকাশিত লক্ষণ গুলো আপনার আসে পাশে অন্য কারো মধ্যে অথবা আপনার মধ্যে লক্ষণীয় হয়?
কেইস ভিত্তিক মূল্যায়ন
প্রশ্ন ১: জুঁইও জাহানের ঘটনার আলোকে নিচের কোন কোন আক্রমণাত্বক আচরণ লক্ষণীয় হচ্ছে?
- খিটখিটে মেজাজ;
- নিয়ম ভঙ্গ করা;
- উদ্বিগ্নতা;
- প্রাণী বা অন্য কিছুর প্রতি শারীরিক শক্তি প্রদর্শন;
- নিজেকে/ অন্যকে আঘাত করা;
আক্রমণাত্মক আচরণের লক্ষণ
- উদ্বিগ্নতা, ভয় পাওয়া
- বিনা কারণে মেজাজ দেখানাে
- খিটখিটে মেজাজ বা রাগ প্রকাশ
- মন খারাপ থাকা
- সঠিকভাবে মনে করতে না পারা
- গুছিয়ে কোনাে কাজ করতে না পারা
- অন্যদের সাথে যােগাযােগে সমস্যা
- নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করা
- জিনিসপত্র ভাঙা
- অল্পতেই বিরক্ত হওয়া, নিয়ম ভঙ্গ করা
প্রশ্ন ১: আক্রমণাত্নক আচরণ কোনটি?
ক. আত্নবিশ্বাসের অভাব;
খ. খিটখিটে মেজাজ;
গ. ভয় পাওয়া;
ঘ. বিরক্তিবোধ;
প্রশ্ন ২: কোন ধরনের আচরন প্রায়ই পারিবারিক নিয়ম ভঙ্গ করে?
ক. আক্রমণাত্নক
খ. হিংসাত্নক
গ. বিদ্বেষমূলক
ঘ. সবগুলো
প্রশ্ন ৩: কাজে আগ্রহ হারানো কিসের মূল উপসর্গ?
ক. উদ্বিগ্নতা
খ. বিষণ্ণতা
গ. ব্যক্তিগত সমস্যা
ঘ. কোনটিই নয়
প্রশ্ন ৪: উদ্বিগ্নতার শারীরিক লক্ষণ কোনটি?
ক. অস্থিরতা
খ. ক্লান্তি অনুভব
গ. ক্ষুধামন্দা
ঘ. হতাশা
প্রশ্ন ৫: চাপের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া কি?
ক. উদ্বেগ
খ. হতাশা
গ. বিষণ্ণতা
ঘ. দুশ্চিন্তা